এক কৃষক একজন মহাজনের কাছ থেকে চাষের জন্য অনেক টাকা ধার নিয়েছিল। কিন্তু সঠিক সময়ে সেই ধার পরিশোধ করতে না পারায় সুদে-আসলে অনেক টাকা হয়ে যায়। মহাজন তাগাদা দিতে থাকে, কিন্তু চাষবাস ভাল না হওয়ার জন্য কৃষক ধার পরিশোধ করতে পারছিল না।
কৃষকের এক মেয়ে ছিল। সেই মেয়েকে দেখে মহাজনের মাথায় কুট-বুদ্ধি এল। মহাজন কৃষককে প্রস্তাব দিল, যদি তার সাথে মেয়ের বিয়ে দেয় তাহলে যত টাকা ধার আছে সবটাই মকুব করে দেবে। এবং একটা খেলার মাধ্যমে এই বিয়ে হবে কি না তা নির্ধারিত হবে।
মহাজন বলল, একটি ব্যাগে সে দুটি পাথর রাখবে। একটি সাদা ও একটি কালো। মেয়েটিকে সেই ব্যাগ থেকে একটি পাথর বের করতে হবে।
যদি কালো পাথর তোলে, তাহলে মহাজনকে বিয়ে করতে হবে এবং সমস্ত ঋণ মকুব হয়ে যাবে।
যদি সাদা পাথর তোলে, তাহলে মহাজনকে বিয়ে করতে হবে না অথচ সমস্ত ঋণ মকুব হয়ে যাবে।
ঋণ শোধের অন্য কোন উপায় না দেখে কৃষকের মেয়ে ইচ্ছে না থাকলেও রাজী হয়ে গেল।
কৃষকের বাড়ির সামনে বাগানেই অনেক পাথরের টুকরো ছিল। মহাজন সেখান থেকে ২ টো পাথর তুলে নিয়ে একটা ব্যাগে ভরে ফেলল এবং মেয়েটিকে ব্যাগ থেকে একটি পাথর তুলতে বলল।
মেয়েটি দূর থেকে লক্ষ্য করেছিল, যে মহাজন ২টোই কালো পাথর ব্যাগে ভরেছে।
এই জটিল পরিস্থিতিতে মেয়েটির কাছে দুটি উপায় আছে —
১) ব্যাগ থেকে দুটি পাথর একসাথে বের করে মহাজনের জালিয়াতি সকলের সামনে প্রকাশ করে দেওয়া।
২) ব্যাগ থেকে একটি পাথর তুলে মহাজনকে বিয়ে করে বাবা ঋণ পরিশোধের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা।
কঠিন পরিস্থিতি মানুষকে অনেক সময় দিশাহারা করে দেয়।
মেয়েটি বুদ্ধিমতি। সে ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে একটি পাথর বের করে কেউ দেখার আগেই পড়ে থাকা পাথরের স্তুপে ফেলে দিয়ে মহাজনকে বলল-
ওহ, পাথরটা পড়ে গেল। কি রঙের পাথর বের করেছি আমিও দেখিনি। আপনি ব্যাগের ভেতর কি রঙের পাথর আছে সেটা বের করে দেখান। তাহলেই বোঝা যাবে আমি কোন পাথরটা বের করেছিলাম।
ব্যাগের মধ্যে থাকা পাথরটি কালো। মহাজন বলতেও পারছে না যে সে ধোঁকা দিয়ে দুটোই কালো পাথর রেখেছিল। মেয়েটি তার বুদ্ধির জোরে বাবার ঋণ পরিশোধ করল এবং নিজেও সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা পেল।
কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে অনেক সময় দিশাহারা মনে হয়। কিন্ত হাল ছেড়ে না দিয়ে একটু অন্যভাবে ভাবতে চেষ্টা করলে, সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায়।