পরিবেশ আমাদের উপর কী প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে এটি আমাদের আচরণকে প্রভাবিত করে?
একটি তোতা দম্পতি একটি বটগাছে তাদের বাসা বানায়। স্ত্রী তোতা পাখিটি বাসাটিতে দুটি ডিম পাড়ে। কিছুদিন পর ডিম থেকে দুটি ছানা বের হয়। বাবা-মা নতুন তোতাপাখির ভালো যত্ন নেন। কয়েক সপ্তাহ পরে, বাচ্চা তোতাগুলি উড়তে শিখে যায়।
পুরুষ পাখিটি বলল, “আমরা আমাদের বাচ্চাদের ভালো যত্ন নিয়েছি। আমরা তাদের ভালো খাবারও দিয়েছি। একসঙ্গে খেলেছে, একসঙ্গে উড়তে শিখেছে। এখন যেহেতু তারা নিজেদের যত্ন নিতে পারে, আমাদের ধীরে ধীরে তাদের স্বনির্ভর হতে দেওয়া উচিত।”
প্রতিদিন সকালে, অভিভাবক পাখিরা তাদের বাচ্চাদের জন্য খাবার আনতে বেরিয়ে পড়ত। তারপর সন্ধ্যায় বাচ্চাদের খাবার নিয়ে ফিরত।
এক শিকারী কিছুদিন ধরে তোতাপাখির এই রুটিন দেখছিল। তিনি জানতেন যে বাবা-মা পাখিরা সকালে চলে যায়। তারা চলে যাওয়ার পর, শিকারী বাচ্চা তোতাপাখি ধরার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরিকল্পনা মোতাবেক শিকারী তোতাপাখিগুলো ধরে ফেলে। তরুণ তোতাপাখিরা শিকারীর কবল থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করেছিল এবং দুটি পাখির মধ্যে একটি শিকারির হাত থেকে পালিয়ে উড়ে চলে যায়। কিন্তু শিকারী অন্য শিশু তোতা পাখিটিকে খাঁচায় বন্দী করে বাড়িতে নিয়ে যায়।
শিকারীর বাচ্চারা তোতাপাখির সাথে খেলা করত। খুব তাড়াতাড়ি, শিকারীর বাড়িতে তোতাপাখি কয়েকটি শব্দ বলতে শিখেছিল। শিকারীর ছেলেমেয়েরা বাবাকে বলল, বাবা, আমাদের তোতাপাখি কিছু কথা বলতে শিখেছে।
শিকারীর হাত থেকে পালিয়ে আসা অন্য বাচ্চা তোতাপাখিটি একটি আশ্রমে আশ্রয় নেয়। আশ্রমে কিছু ঋষি বাস করতেন। তোতাপাখিটি সেখানেই থেকে গেল। পাখিটি প্রতিদিন ঋষিদের বক্তৃতা শুনত। কিছুদিনের মধ্যে সে এই শব্দগুলোর কিছু বলতেও শিখে গেল।
একদিন এক পথচারী শিকারীর কুঁড়েঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তিনি ক্লান্ত, তাই তিনি বিশ্রামের জন্য কুঁড়েঘরের কাছে বসলেন। সেখানে তিনি একটি তোতা পাখির কণ্ঠস্বর শুনতে পান। তোতাপাখি বলছিল, “বোকা, তুমি এখানে কেন এসেছ? আমি তোমার গলা কেটে দেব।”
এমন বাজে কথা শুনে পথচারী খুব খারাপ লাগল। তিনি তৎক্ষণাৎ উঠে সেখান থেকে দ্রুত চলে গেলেন। কিছুক্ষণ হাঁটার পর আশ্রমে পৌঁছলেন। আশ্রমের তোতাপাখি পাশের একটি গাছে বসে ছিল।
তোতাপাখি বলল, “স্বাগতম! প্রিয় পথিক, এই আশ্রমে স্বাগতম। এই বনে আমাদের অনেক ভালো ফল আছে। তুমি যা খুশি খাও। এখানকার ভালো মানুষ তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করবে।”
পথচারী অবাক হয়ে গেল। তিনি তোতাপাখিকে বললেন, “একটি শিকারীর কুঁড়েঘরের কাছে আমি একটি তোতাপাখির বাচ্চার সাথে দেখা করেছি। সে খুব খারাপ কথা বলছিল তাই আমি সাথে সাথে চলে গেলাম। এখন, আমি তোমার সাথে দেখা করছি কিন্তু তুমি খুব ভালো কথা বলো। তোমাকে মনে হয় সদয় এবং নরম মনের প্রাণী। কিন্তু তুমি আর সেই তোতাপাখি দুজনেই একই রকম পাখি, তবুও তোমার ভাষায় এত পার্থক্য কেন?”
এই বক্তব্য থেকে আশ্রমের তোতাপাখি অনুমান করলেন যে অন্য তোতাপাখিটি তার নিজের ভাই ছাড়া আর কেউ হবে না। সে বললো, “অন্য তোতাপাখি আমার ভাই। কিন্তু আমরা দুটি ভিন্ন জায়গায় বড় হয়েছি। আমার ভাই শিকারির ভাষা শিখেছে কিন্তু আমি ধার্মিকদের ভাষা শিখেছি।
যে ধরনের মানুষদের সংস্পর্শে আমরা থাকি, আমাদের চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা সেই ধরনেরই হয়ে যায়।
আমরা যখন মন্দিরে যাই তখন আমরা শান্তি অনুভব করি, যখন আমরা থানায়/হাসপাতালে থাকি তখন আমরা অস্থির হই, এবং তাই, বিভিন্ন পরিবেশ অনুসারে আমাদের মনের অবস্থা পরিবর্তিত হয়।
কেন এমন হয়?
আপনি কি কখনো এই পরিবর্তনের প্রতি মনোযোগ দিয়েছেন?
ভাবুন।
এই পরিবর্তনকে অনুভব করার চেষ্টা করুন। রোজের ব্যস্ত জীবনে একটু বিরতি নিন।
আপনি নিজেকে যে ভাবে দেখতে চাইছেন, সেই ধরণের পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্যে আছেন তো?
সেই ধরণের মানুষদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন তো?
যে ধরনের মানুষদের সংস্পর্শে আমরা থাকি, আমাদের চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা সেই ধরনেরই হয়ে যায় এবং এটি আমাদের রোজকার কাজকে ও কাজ থেকে প্রাপ্ত কর্মফল কে প্রভাবিত করে।